আবু আফজাল সালেহ এর সাক্ষাৎকার প্রকাশ ।। পেখম

আবু আফজাল সালেহ সমকালীন সময়ের একজন কবি, প্রাবন্ধিক কলামিস্ট তিনি সাতক্ষীরা অঞ্চলের (বিআরডিবি)’ উপ-পরিচালক হিসেবে রত আছেন।  তিনি ১৯৮১ সালের ১৫ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলার মদনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম এবং মা শাহিদা বেগম গৃহিণী। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে বড় আবু আফজাল সালেহ গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করন। দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকেবাংলা ভাষা সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।  তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাংলা দৈনিক, পোর্টাল ম্যাগে নিয়মিত কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য-আলোচনা, ফিচার ইত্যাদি লেখালেখি করেন। ঢাকা থেকে তার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছ: ১. (বারবার ফিরে আসি-কবিতা ২০১৮) . (ছড়ায় ছড়ায় উৎসব-ছড়া ২০১৮) এবং . (বলেই ফেলি ভালোবাসি-কবিতা ২০২২) (কাব্যশৈলীর কতিপয় দিগন্ত-প্রবন্ধ) এবং পর্যটন বিষয়ক কবিতার বই (জল পাথরে বন পাহাড়ে) প্রকাশের পথে।  সাহিত্যে অবদান রাখায় উল্লেখযোগ্য পুরস্কার/পদক হচ্ছে, চাঁদপুর চর্যাপদ একাডেমি দোনাগাজি পদক-২০২১ প্রিয়বাংলা লেখক সম্মাননা-২০২৩। এছাড়া সাহিত্যরস সম্মাননা-২০১৮ এবং দৈনিক মানববার্তা সম্মাননা-২০১৮ পান।

তাঁর লেখালেখিযাপন অন্যান্য বিষয়ের ওপর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি সম্পাদক দ্বীপ সরকার

 

পেখমঃ প্রত্যেক কবি বা সাহিত্যিকের লেখালেখি শুরুর একটা প্রেক্ষাপট থাকে। আপনার সেক্ষেত্রে কোন কিছু আছে কিনা? 

 

 

আবু আফজাল সালেহঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সফল ছিলাম। এখান থেকেই লেখার প্রতি আগ্রহ জন্মে। রচনা লিখতে গিয়ে বিভিন্ন কবিতার অংশ তুলে ধরতাম। মনে হত আমিও যদি লিখতে পারতাম। হাইস্কুল জীবনে আমি খুবই কনজারবেটিভ ছিলাম। কিন্তু অন্তরে প্রেম-ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল। কোনও কোনও অনামিকার প্রতি আকর্ষণ থেকেই দুর্বল পঙ্ত্তির  জন্ম নেয়। পত্রিকায় পাঠাতে থাকি কলেজ জীবনে। ছাপাও হয়। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কাগজ (প্রথমে পাক্ষিক সাপ্তাহিক ছিল) কলাম, কবিতা ফিচার ছাপা হতে থাকে। নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গার কিছু পত্রিকায় কবিতা ছাপা হতে থাকে। ঢাকার পত্রিকায় কালেভদ্রে লেখা ছাপা হতে থাকে। থেকেই শুরু। তবে সাংসারিক প্রেমজনিত কারণে ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত লেখায় বিরতি হয়। ২০১২ সালে ভ্রমণ ফিচার দিয়ে জাতীয় মাধ্যমে লেখা প্রকাশ হতে থাকে। ২০১২ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম ভ্রমণফিচার ছাপে বাংলানিউজ২৪ দৈনিক সংবাদ। ছড়া ছাপে ডাংগুলি (বাংলাদেশ প্রতিদিন)   কালের কণ্ঠ। ২০১৯ সালে দৈনিক সংবাদে প্রথম কলাম ছাপা হয়। জাতীয় পর্যায়ে প্রবন্ধ প্রথম কোন পত্রিকায় ছাপা হয় মনে নেই। সুদূর লালমনিরহাটে চাকুরির পোস্টিং হলে একাকী থাকায় ছুটি রাতে প্রচুর সময় পাই। ফলে, সময় কাটাতে শখের বসে  ২০১৮ সাল থেকে প্রচুর পরিমাণে  লেখা শুরু করি এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশ হতে থাকে।  কয়েকবছর পর থেকে লেখাকে সিরিয়াস হিসাবে বেছে নিই। 

 

                         এ সময়ের 
জনপ্রিয় ওয়েব ম্যাগাজিন 
‘কুয়াশা ’ পড়তে ক্লিক করুন


পেখমঃ লেখালেখিতে আপনার প্রধান এবং প্রথম অনুপ্রেরণা কে? জানতে চাই।

 

আবু আফজাল সালেহঃ নিজ অজপাড়াগাঁ মদনা থেকেই হাইস্কুল জীবনেই গ্রামের কাগজ (যশোর) দৈনিক মাথাভাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) পত্রিকার সাংবাদিকতা করতাম। দর্শনা সাংবাদিক ইউনিটির কার্যকরী সদস্য ছিলাম। যশোরের দৈনিক গ্রামের কাগজের শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন ভাই হাতে লিখে (সাল ঠিক মনে নেই, ২০০০ সালের আগে পিছে হবে) লেখার জন্য অভিনন্দনপত্র  পাঠান। গ্রামের ক্ষুদ্র লেখকের জন্য যা বড় অনুপ্রেরণা তখন থেকেই লেখার প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ে। মবিন ভায়ের অনুপ্রেরণার পত্র সারাজীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে। আর লেখার পিছনে নারী বা প্রেমিকার ভূমিকা থাকে। আমার অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে।

 

পেখমঃ  আমরা যতটুকু জানি আপনার প্রকাশিত তিন বই। প্রথম বইয়ের ঘ্রাণ কেমন ছিলো এবং আপনার অনুভূতি?

 

আবু আফজাল সালেহঃ অনেক দিনের তাগিদ ছিল একটা বই প্রকাশ করা। পাঠক লেখক সমাজের তাগাদা অবশেষে ২০১৮ সালে পূর্ণতা পায়।এবং মানুষ’ প্রকাশনী থেকেবারবার ফিরে আসিপ্রথম কবিতার বই বের হয়। এটির রিভিউ ইংরেজি দৈনিক অরজারভার- প্রকাশ হয় বছরই। প্রথম বই লেখকের কাছে নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়। অনুভূতি আসলে প্রকাশ করার ভাষা থাকে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বই প্রকাশ করা আভিজাত্যের একটা বিষয় (যদিও আমি ব্যাক্তগতভাবে তা মনে করি না) প্রথম বই প্রকাশ  আভিজাত্যের ফ্লেভার আনে বলেই অধিকাংশ পাঠক লেখক মনে করেন। প্রথম বই প্রকাশিত হওয়ার পর দেখে আমাকে দারুণ আপ্লুত করেছিল। প্রথম কিছুদিন বারবার বই নাড়াচাড়া করে দেখেছি, বইতে প্রচুর চুমু খেয়েছি। 

 

 

পেখমঃ  আপনি প্রবন্ধ,কবিতা,ভ্রমণ সাহিত্য এবং কলাম লেখক হিসেবে বেশ আলোচিত। বিশেষ করে প্রবন্ধ কলাম। এই বিষয়গুলির মধ্যে কোনটা আপনাকে বেশি টানে।

 

আবু আফজাল সালেহঃ ভ্রমণ সাহিত্য আমাকে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত আনতে সহায়তা করেছে । এরপর কলাম। সবশেষে প্রবন্ধ আমাকে পাঠকের কাছে নিয়ে যাচ্ছে । কলামে কিছু করার থাকলেও সরকারি চাকুরির সুবাদে কিছু অনুশাসন মানতে হয়। ফলে, সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেই কলাম লেখার চেষ্টা করি। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও কলামে আর বেশি উন্নতি করতে পারছি না! আমার অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দিক হলো (নিজের বিবেচনায়) সাহিত্য-আলোচনা বা প্রবন্ধ। তবে দুটি বিষয়ে পড়াশুনা করছি। দুটি বিভাগে আমার অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। তারপরেও বলি, কবিতা আমাকে বেশি টানে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি  শাখায় আমি অনেক পিছিয়ে। কবিতা সমালোচনা সাহিত্যে উন্নতি করার চেষ্টা করছি। সাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা কবিতা মাধ্যমের কম কথার মধ্যে বহুমাত্রিক বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়। 

 

 

পেখমঃ প্রবন্ধে একে অপরের সাথে কপি পেস্টের মতো মনে হয়। বিশেষ করে কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা মনীষীদের জীবন পর্যালোচনামুলক প্রবন্ধে একে অন্যের লেখায় অনেক মিল পাওয়া যায়। নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনেক কম। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?

 

আবু আফজাল সালেহঃ প্রবন্ধে আমরা অনেক পিছিয়ে। আপনার অভিযোগ আমার কাছে সত্য বলেই মনে হয়। ব্যতিক্রম তো আছেই । তবে পরিমাণে অনেক কম। বর্তমানে আমরা পড়ি কম, লিখতে চাই বেশি। অনেকের ক্ষেত্রে ছাপার অক্ষরে নিজের নাম প্রকাশ করার লোভ থেকেই লেখার ঝোঁক বেশি হয়। আর বেশি লিখতে গিয়েই ভালো লেখার বের হচ্ছে কম। গদ্যরীতি, ভাষা ইত্যাদিতে পরিবর্তন ব্যতিক্রম আনতে না-পারলে ব্যর্থ হতে হবে। কম সংখ্যক যারা প্রবন্ধ লিখছি পরবর্তীতে টিকে থাকার সংখ্যা নগন্য হয়ে যায়। কবিতার মতো প্রবন্ধ বা গদ্যে নিজস্ব একটা ভাষা স্টাইল তৈরি করতে হবেই। কল্পনাশক্তি, তথ্য বিষয় ভাবনার গভীরে প্রবেশ করাতে সক্ষম না-হলে প্রবন্ধকারের সার্থকতা নেই। একঘেয়েমি স্টাইল পাঠক পছন্দ করে না। নিজস্ব পর্যবেক্ষণ যোগ করতে হলে প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়। ধর্ম যেমন পড়তে হবে, বিজ্ঞান-সমাজ-রাষ্ট্র যেমন পড়তে হবে, তেমনি মার্ক্সও পড়তে হবে, পড়তে হবে শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন আন্দোলন, মতবাদ প্রভৃতি। বলা চলে, সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।   বুদ্ধদেব বসু কবিতা ব্যখ্যার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ইংরেজিতে পারদর্শি ছিলেন। তিরিশের অনেক কবিই ইংরেজিতে পারদর্শি ছিলেন। ফলে, কবিতায় আধুনিকতা আনা কবিতা-আলোচনায় তারা সফল ছিলেন। পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক-আলোচনা একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এটার পরিমাণ বাড়তে প্রচুর কবিতা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়তে হবে। তাহলেই,তুলনামূলক আলোচনার পর নিজস্ব পর্বেক্ষণ দেওয়া সুবিধা হয়। কবিতার ক্ষেত্রে প্রকরণ আলোচনা একেবারেই কম। এটার পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাহলেই,পর্যালোচনামূলক প্রবন্ধ/আলোচনায় পাঠককে টানা সহজতর হবে।

 

 

পেখমঃ  বিভিন্ন পত্র পত্রিকাগুলো আপনার প্রবন্ধ বেশ টানে। সে ক্ষেত্রে পত্রিকাগুলো গদ্য সাহিত্যে কেমন সম্মান প্রদান করেন। লেখক সম্মানী বিষয়টা আপনার নিকটে কেমন মনে হয়?

 

আবু আফজাল সালেহঃ লেখকসম্মানী লেখকের অধিকার। এক্ষেত্রে আমরা একেবারেই পিছে। কয়েকটি পত্রিকা/পোর্টাল/ম্যাগাজিন লেখক সম্মানী দিয়ে থাকে। কিছু মাধ্যম সিনিয়র লেখকদের সম্মানী দিলেও তরুণদের লেখক সম্মানী দেয় না। লেখার জন্য কম করে হলেও লেখক সম্মানী দেওয়ার প্রথা থাকা উচিত বলে মনে করি।

 

 

পেখমঃ আপনার "বলেই ফেলি ভালোবাসি" কাব্যে পাঠকদের কিরুপ ম্যাসেজ দেবে?

 

আবু আফজাল সালেহঃ -কবিতাগ্রন্থের বেশিরভাগ কবিতাতেই প্রেম, ভালোবাসা বিচ্ছেদের সুর আছে। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান অনুষঙ্গ হয়ে সমন্বয় করে বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃষ্টি যেমন আছে, আছে জলপাথরের কথা, আছে বনবাদাড়ের কথা । প্রেম, প্রকৃতি, বৃষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

 

 

পেখমঃ সমসময়ে কোন প্রাবন্ধিকের লেখা আপনাকে বেশি টানে?

 

আবু আফজাল সালেহঃ এটা আমার জন্য বিব্রতকর হবে। -শাখায় এখন খুব ভালো অবস্থানে নেই।  সমালোচনা সাহিত্যে খরা চলছে। ধৈর্য প্রচুর পড়াশুনা হচ্ছে প্রবন্ধের মূলসূত্র। ব্যতিক্রম কিছু বাদে আমাদের সমসাময়িক লেখক এসব ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।   ‘লিটলম্যাগহচ্ছে রক্তক্ষরণের আরেক নাম। বেশিরভাগ দৈনিক পত্রিকার অবহেলা সিন্ডিকেট প্রাবন্ধিক তৈরিতে ভূমিকা রাখছে না। স্বজনপ্রীতি, দল-ধর্ম, বলয়ের বাইরে কম-যাওয়া এখনকার দৈনিকের সাহিত্য পাতার মূল চরিত্র। এক্ষেত্রে লিটলম্যাগ ভালো প্রাবন্ধিক তৈরিতে মূল ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ লিটলম্যাগও সিন্ডিকেট দৈনিকের মতো অবস্থা ব্যতিক্রম কিছু থাকলেও আর্থিক সমস্যায় বিকশিত হতে-পারা ম্যাগের সংখ্যা খুবই কম।  এখন -ম্যাগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।  তাদেরকেও এপথ পরিহার না করলে সাহিত্যের মুক্তি নেই। নিরপেক্ষতা আলোচনা সাহিত্যের বা প্রাবন্ধিকের মূল চরিত্র হওয়া উচিত বলে মনে করি। বেশিরভাগ লেখকের মধ্যে নিরেপেক্ষতার খুবই অভাব রয়েছে।

 

 

পেখমঃ  একটা আদর্শ প্রবন্ধ লিখতে কোন কোন বিষয়ের ওপরে জোর দেয়া উচিত?

 

আবু আফজাল সালেহঃ আগের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে -প্রশ্নের অনেক বিষয়াদি চলে এসেছে। একটি বিষয়কে বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত করাই প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য। মনশীলতার সেরা খেলা হয় প্রবন্ধের মাধ্যমে। বিভিন্ন মতাদর্শ,শিল্প-সাহিত্য আন্দোলন, মতবাদ জানতে হবে। ধর্ম-অধর্ম, সাহিত্য পড়তে হবে। ভালো ম্যাগাজিন বা পত্রিকার আর্টিকেল প্রবন্ধ পড়তে হবে। তথ্য আপডেট রাখতে হবে। তথ্যের যথার্থতা থাকতে হবে। এজন্য প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। মোটকথা হচ্ছে, একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় এনে পাঠকের কাছে স্পষ্ট করাই প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য। 

 

পেখমঃ আপনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। সেক্ষেত্রে আপনি কোন পরিচয়ে ফোকাস হতে চান? কবি, প্রাবন্ধিক নাকি সরকারি পদ পদবি?

 

আবু আফজাল সালেহঃ চাকুরি ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি পদ ব্যবহারে বিব্রতবোধ করি।

 

 

পেখমঃ বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার উপায় বলুন?

 

আবু আফজাল সালেহঃ বিশ্বদরবারে বাংলাসাহিত্য পৌঁছে দেওয়ার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে অনুবাদ-সাহিত্যে জোর দেওয়া। বাংলাভাষার সাহিত্য ইংরেজি অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বপাঠকের কাছে বাঙলা সাহিত্য তুলে দিতে হবে। এখানে আমরা অনেক পিছিয়েবলা যেতে পারে প্রায় জিরো। সমসাময়িক বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লিখতে হবে। এতে বিশ্বপাঠককে আকৃষ্ট করা যাবে। পুরোনো রীতি বিষয় অবলম্বন করে পাঠক আকৃষ্ট করা যাবে না। নতুন কিছু করতেই হবে। ফলে প্রচুর বিশ্বসাহিত্য পড়তে হবে, অনূদিত হতে হবে।  আমাদের বেশ কিছু উন্নত সাহিত্যকর্ম অনুবাদ (ভালো অনুবাদ) করলে বিশ্বপাঠককে ধরে রাখা যেত। আমরা তা পারিনি বা এখনো পারছি না। রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা করলে ভালো হবে। সংশ্লিষ্ট কাজ বা তদারকির জন্য প্রকৃত লেখকদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্য-আলোচনা, সেমিনার বা অন্যান্য সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে ইংরেজি বা সংশ্লিষ্ট ভাষার সাহিত্যে যাদের দখল আছে এমন উপযুক্ত প্রকৃত লেখক মনোনয়ন দিতে হবে। এব্যাপারে আমরা অনেক পিছিয়ে। বিষয়ে সংশ্লিষ্টদেরকে আন্তরিক নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যর্থ হচ্ছি বলেই, বাংলাসাহিত্য বিশ্বপাঠকের কাছে যাচ্ছে না বা ভালো অনুবাদের অভাবে বিশ্বপাঠকের আকর্ষণ পাচ্ছে না।

 

 

পেখমঃ  আপনার অর্জন কি কি বলুন? 

 

আবু আফজাল সালেহঃ আমার কোনও অর্জন নেই। যদি কোনও অর্জন থাকে তা পাঠক বলতে পারবেন। তবে লেখা নিয়ে ব্যক্তিগত খুশির জায়গা আছে। কয়েকটি হচ্ছেঃ () আমার কিছু কলাম কার্যার্থে জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপিত হয়েছে, সংসদের ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত আছে; () বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পোর্টালে লেখা ছাপা হওয়া; () বিশ্বের বাংলা বিভিন্ন মাধ্যমে লেখা প্রকাশিত হওয়া; () ওপার বাংলার অন্যতম শীর্ষ দৈনিক কলকাতার আজকাল-সহ  দৈনিক একদিন (কলকাতা), দৈনিক উত্তরের সারাদিন, দৈনিক প্রান্তজ্যোতি (আসাম) ইত্যাদি দৈনিকে থেকে লেখা প্রকাশ হওয়া আমার জন্য ব্যক্তগত খুশির খবর। 

 

 

পেখমঃ সাহিত্য নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি বলুন?

 

আবু আফজাল সালেহঃ বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে বাঙলা কবিতার তুলনামূলক একটা অবস্থান নির্ণয় করে উপমহাদেশের পরিবেশ বিবেচনা করে সমালোচনা সাহিত্যে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি। এজন্য এখন পড়াশুনা করছি। নিজের সাহিত্যকর্ম নিজেই ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করতে ইচ্ছুক। এজন্য  পড়াশুনা করছি। দক্ষ হয়ে উঠলে বাংলাসাহিত্যের ভালোভালো বিষয় বিশ্বমাধ্যমে/পাঠকের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা আছে। একটি আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির ইচ্ছে আছে। যেখান থেকে নবতর একটা যাত্রা শুরু হতে পারে। অক্টোপাস নামে একটি ম্যাগ হবে সে আন্দোলনের মুখপত্র। সে-দলে বেশ কিছু প্রতিভাময়ী তরুণ লেখক/সংগঠককে রাখার ইচ্ছে আছে।  আপাতত পর্যন্ত পরিকল্পনাই প্রকাশ করা হল।  আরও কিছু পরিকল্পনা আছে সেগুলি আগেই প্রকাশ করছি না। কয়েক বছর পরে প্রকাশ হতে থাকবে অক্টোপাস আন্দোলনের মাধ্যমে। 

 

 

পেখমঃ আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ। কোন সময়টাতে আপনি লেখালেখির জন্য বেছে নেন।

 

আবু আফজাল সালেহঃ কথা ঠিক। তবে প্রতি কর্মস্থলে একাকী থাকি।  ফলে রাতে প্রচুর সময় পাই। রাতের সময়ের সদ্ব্যবহার করে থাকি। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইজ সবসময় কাছে থাকে। কোনও থিম আসলে নোট লিখে রাখি। অবসর রাতে ব্যখ্যা করে লিখি। কবিতার ক্ষেত্রেও এমন হয়। আমি প্রচুর ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। জার্নির সময় ইলেক্ট্রিক ডিভাইজ ব্যবহার করি। বেশি ইউটিউব ব্যবহার করি ভ্রমণে অবসরে। আলোচনা শুনি এবং গান শুনি/দেখি। যানবাহনে পারতপক্ষে জানালার পাশে সিট নিই। ফলে চোখ কান থেকে একইসঙ্গে ডাবল তথ্য পাই। থেকে অনেক থিম মাথায় আসে। পরবর্তীতে অনেক  থিমই লেখায় রূপান্তর করি। আর একটা বিষয় আমাকে ঋদ্ধ করে। সেটা হচ্ছে জেলা পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহণ করতে হয় (যেমন সমন্বয়সভাসহ নদী রক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ, বিভিন্ন প্রকল্পের সভা, পরিবেশ নিয়ে সভা ইত্যাদি) এখান থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আপডেট তথ্য পেয়ে থাকি। সে-তথ্য কলাম বা অন্য লেখা লিখতে অনেক সহয়তা করে থাকে।     

 

 

পেখমঃ বাংলাদেশে সাহিত্যের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রের দায় কতটুকু প্রভাব ফেলেছে। অথবা ঘাটতি কোথায় বলুন?

 

আবু আফজাল সালেহঃ  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে বলাটা আমার কাছে বিব্রতকর বলেই মনে হয়। তারপরেও যেহুতু প্রশ্নটা এসেছে তাই কিছু বলতেই হয়। কিছু উত্তর আগেই উল্লেখ করেছি। তারপরেও বলি, সাহিত্যের উৎকর্ষতা আনতে রাষ্ট্রের ভূমিকা অনেক। তবে, লেখকদের লেজুড়বৃত্তিক মনোভাব, অপ্রাসঙ্গিক চাওয়া-পাওয়া বেশি, অনেকের নোংরামি অপচেষ্টা রাষ্ট্র তার সঠিক ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করে। এখানে লেখকদের দায়ই বেশি। রাষ্ট্র ভালো ভূমিকা তখনই পালন করতে পারবে যখন লেখকগোষ্ঠী তার নিরপেক্ষ সাহিত্যিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করবে। এখনকার লেখক সাহিত্যিক বা প্রাসঙ্গিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একেবারেই আন্তরিক নন। ব্যক্তগত পদপদবি ব্যক্তগত অর্জনে যথেষ্ট আন্তরিক। ফলে, এখানে রাষ্ট্রের দায় দেখি না। তবে, রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। সেক্ষেত্রে লেখকদেরকে আন্তরিক হতে হবে। লেখকদেরকে স্বাধীন থাকাই ভালো। ফলে, আলাদা মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকাটা আমার পছন্দ হয় না। এজন্য সাহিত্যের জন্য আলাদা বিভাগ করার তাগিদ অনুভব করে কোনও প্রস্তাব আমি করিনি। বাংলা একাডেমিকেই শক্তিশালী করা যেতে পারে। 

 

 

পেখমঃ   তরুণদের নিয়ে আপনার পরামর্শ কি?

 

আবু আফজাল সালেহঃ পড়াশুনার কোনও বিকল্প নেই। এখনকার তরুণলেখকদের বেশিরভাগ পড়াশুনায় পিছিয়ে। পড়ার ধৈর্য কম। গতানুগতিক পরিহার না করলে সাহিত্যে ভবিষ্যতে টিকে-থাকা অসম্ভব। পরিচয়, পদ-পদবি বা অর্থ সাময়িকভাবে টাইমলাইটে আনলেও ভবিষতের জন্য তা অন্ধকার। নিজের শক্তিতেই নিজস্ব লেখকসত্তা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে তথ্য, তত্ত্ব, জ্ঞ্যান অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়াতে হবে। ভ্রমণ আরেকটি ভালো মাধ্যম। বিভিন্ন সংস্কৃতি, প্রবণতার বহুমাত্রিক সমন্বয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায় কম সময়ে। পরবর্তীতে লেখায় প্রাসঙ্গিক প্রয়োগে লেখায় যথার্থতা স্পষ্টতা আনয়ন করা সহজতর হয়। কবিতায় অলংকারের প্রচুর প্রয়োগ দেখা যায়। অন্যান্য লেখাতেও প্রয়োগ করলে পাঠকের কাছে লেখার বক্তব্য বা বার্তা কংক্রিট স্পষ্ট করতে সহায়তা করে।নতুন কিছু করা লেখকের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত। তরুণদেরকে বিষয়ে মনযোগ দেওয়া অতি প্রয়োজন বলে মনে করি। বাংলাসাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যভাষার সাহিত্যও পড়তে হবে। মানসলোক বাস্তবায়নে নিরপেক্ষতা অক্ষূণ্ণ রাখা লেখার অমরত্ব পাওয়ার আরেকটি গুরত্বপূর্ণ সূত্র। -বিষয়েও অগ্রজদের পাশাপাশি তরুণদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। 

 

পেখমঃ  পেখমের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

 

আবু আফজাল সালেহঃ  সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে আমার কিছু বিষয় শেয়ার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পেখম আপনাকেও ধন্যবাদ।  


 

Post a Comment

أحدث أقدم