বঙ্গবন্ধু ও একটি গাছ
বেঁচে থাকলে আজ তোমার বয়স হতো ১০০ বছর
আমাদের গ্রামে কবু বাজারের বট গাছটার বয়সও ১০০ বছর
দাদা মরহুম সৈয়দ ফাজেল আলী এ গাছটা রোপন করেছিলেন
১৯২০ সালে ১৭ মার্চ। গাছটা আছে আর তুমি না থেকেও আছো
কবু বাজারের ১০০টি দোকান, বাঁশের বেড়া ছোনের ছাওয়া চাল
ঢেকে রেখেছে বটগাছের ১০০টি শাখা-প্রশাখা। আর তুমি
ছায়া দিয়ে রেখেছো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ১৮ কোটি
মানুষের মাথা। তুমিই তাবত মানুষের ভরসার জায়গা।
সময় দীর্ঘ হচ্ছে, ক্রমান্বয়ে তুমি ছাড়িয়ে যাচ্ছো বটগাছ
কবু বাজার, দেশ, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের সীমানা।
তার জন্য তোমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ
যে পথের বেশির ভাগই ছিল বন্ধুর। রক্তক্ষরণে ভরপুর।
তবু তুমি থামোনি। কারণ তুমি থামতে শেখোনি ।
৩২ নম্বর বাড়ি অথবা ধানমন্ডি লেক
আগন্তুক খোজে ৩২ নম্বর বাড়ি
অথবা ধানমন্ডি লেক
কিন্তু কোথায় ৩২ নম্বর বাড়ি
বা ধানমন্ডি লেক
একটিও খুঁজে পায় না
গোপালগঞ্জ - কাশিয়ানি- চাপ্তা নিবাসী
বৃদ্ধ জহুর আলি।
চাপ্তা বাজারে মতির চায়ের দোকানে
চা খেতে খেতে জহুর আলি জেনেছিলেন
ধানমন্ডি লেকের পশ্চিম পাড়ে
৩২ নম্বর বাড়িতে শেখের বেটা থাকে
লেক আর বাড়ি,একটা পেলে
আরেকটা পেতে কষ্ট হবে না।
তাই শেখের বেটাকে এক নজর দেখতে
জহুর আলি অরফে সানা মীর
চাপ্তা থেকে ছুটে এসেছে এই ঢাকা শহরে।
যদিও জহুর আলির একটা চোখ গেছে অনেক আগে
আরেকটা যাই যাই করছে।
একানব্বই বছর সাত মাস বয়সী
জহুর আলি অরফে সানা মীর
ঘোনাপাড়া থেকে মধুমতি পরিবহনে
গাবতলী বাস ষ্টান্ডে এসে নামে
গন্তব্য ৩২ নম্বর বাড়ি অথবা ধানমন্ডি লেক।
রাসেল স্কোয়ারে এসে
জহুর আলি অরফে সানা মীর
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, লেকে পানি কোথায়?
শুধু রক্ত আর রক্ত।
৩২ নম্বর বাড়ি থেকে আসা
এ রক্তে সর পড়ে আছে
যেমন জহুর আলির কালো গাইয়ের
সদ্য জ্বালানো দুধে
মোটা সর পড়ে থাকে।
এমনই এক নরম বিকেল
সেদিন ছিল এমনই এক নরম বিকেল, বসন্ত বাতাস
কাঁচা রোদে ঘাসফড়িং। দাঁড়িয়াবাঁধা মাঠে ফ্রক পরা মেয়েরা।
পাখিরা ফিরছে ঘরে, তখনো সন্ধ্যা বাতি জ¦লেনি
কিছু আগে শেষ হয়েছে উলু ধ্বনি,মসজিদে আজান।
হঠাৎ করে যুদ্ধ এলো কার্জন হলে, নীল ক্ষেত
পুরনো বইয়ের দোকানে, শিশুর দুধমাখা ভাতে,
হাসপাতালের বারান্দায়, রোগীর পথ্যে ।
গ্রাম থেকে আসে নারী-পুরুষ,ক্ষুধার্ত,রোগাক্রান্ত মানুষ,
মানুষের মিছিল। ডাষ্টবিন খুঁজে খুঁজে খাবার খায়
যুদ্ধকরে কুকুরের সঙ্গে, শকুনের সঙ্গে।
সর্বাত্মক কঠিন যুদ্ধ, জরাজীর্ণ মৃত প্রায় বাবা
ছেলের ঘাড়ে চেপে সীমান্ত পাড়ি দেয়। হাড্ডিসার শিশু
খামচে ধরে রসকসহীন মায়ের বুক । বিহবল মা ।
ন’ মাসে ন’টি ক্যালেন্ডারের পাতা যায় খসে
যুদ্ধাহত মুক্তি ঘরে ফেরে। শূন্য ঘর। শুন্য উঠান ।
অনেকে আবার ফেরেনা । মা বসে থাকে দাওয়ায়,
বাবা ধবল জ্যো¯œায় । ছোট বোন পুকুর পাড়ে । ও জানে
স্টেশন থেকে বড়বিল পাড়ি দিয়ে কোনাকুনি এ পথেই
ঢোকে সবাই সরদার বাড়িতে । কিন্তু সময়ের টানে
দুপুরের ট্রেন যায়, বিকেলের ট্রেন যায়, অবশেষে
রাতের ট্রেনও বোধ হয় চলে যাবে একই ভাবে ।
অন্য রকম বসন্ত
আজ একটি অন্য রকম বসন্ত
এ বসন্ত বাতাসে প্রেম নেই
আছে আগুনের উত্তাপ।
রংধনুতে রং নেই
আছে আগুনমুখো মেঘ।
মনে ঘৃনার বাষ্প
হাসিতে বন্দুকের গুলির শব্দ।
আকাশের ভাষা নেই
রোদে আছে বারুদের গন্ধ।
এ বসন্ত প্রেমের নয়
এ বসন্ত আগুনের
এ প্রেম রক্ত ও মৃত্যুর
এ প্রেম স্বাধীনতার।
সেদিন বসন্ত বিকেলে
সেদিন বসন্তের এক মিষ্টি বিকেলে বিশ^সাহিত্য
কেন্দ্রের বড় হল রুমে কবি-সাহিত্যিক,ছাত্র-জনতা,
মিডিয়ার লোকজন,কবিতা প্রিয় মানুষ জড়ো হয়েছিল সদ্য
প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে বইয়ের নাম
‘একাত্তরের শিশু’, একটি উপন্যাস, একটুকরো ইতিহাস।
একটি শিশু দিগন্ত জোড়া মাঠে দৌড়ায়,ফড়িং
এর পেছনে পেছনে ছোটে নদীর ওপর হেলে থাকা গাছে
উঠে নদীতে ঝাপ দেয়, সাতার কাটে,
গুলতি দিয়ে আম গাছের মগডালে বসা পাখিটাকে
তাক করে গুলি ছোড়ে এ বইয়ে সে শিশুটির কথা লেখা
থাকতে পারত। কিন্তু বইয়ের পাতায় পাতায় লেখা হয়েছে,
সিঁড়িতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত এক শিশুর নৃশংস হত্যার কথা
যে শিশুটি নিজের বাবাকে ভালো করে বাবা বলে ডাকার সময় পায়নি
মায়ের আঁচলে লুকিয়ে থেকেও যে শিশুটি রেহাই পায়নি ওদের হাত থেকে
সে শিশুটির কথাই এ বইয়ে বলা হয়েছে। শিশুটি আজ আর নেই,
শিশুটি আছে শুধু দেয়ালে- ফ্রেমে আর হাজারও শিশুর হৃদয়ে।
إرسال تعليق