তৈমুর খানের পাঁচটি কবিতা || ঈদ আয়োজন ।। পেখম


সম্পর্ক  


আমিও পুরোনো শব্দের কাছে আসি 

উলঙ্গ হই 

সব ইন্দ্রিয় মরে গেলেও চৈতন্য মরে না 

জেগে থাকে নিশিরাত, একাকী মুহূর্তগুলি 

কথা ও কথার সূর্য সব ডুবে যায় একে একে 

তবু আঁধারে খেলা পাতি 

ইচ্ছা গড়াই রোজ কুসুমের কাছে 

কথা নেই, কথা নেই আর — তবু মনে হয় কথা আছে 

উলঙ্গ হই 

বিষাদ আমাকে দ্যাখে 

তার সঙ্গেই শয্যা পাতি 

কেউ আর অবৈধ ভাবে না 

আমরা চৈতন্যের ঘরে আছি 

সংসারী নই তবুও সংসার হয় 

পুরোনো সম্পর্কগুলি এভাবেই বাঁচে ।



মৃত সম্রাট


রোজ মুকুট পরছি 

রোজ ঘোষণা করছি 

তবু ক্যামন চুপচাপ দ্যাখো 

বাতাসও কেঁপে উঠছে না 

গৃহিণী চুড়ি ভেঙে ফেলছে 

উনুন নিভিয়ে দিচ্ছে 

আলতার শিশি উল্টে দিয়ে 

চলে যেতে চাইছে সোজা 

আমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি নিজেকে 

মৃত এক পুরুষ 

মৃত এক সম্রাট 



পুরোনো প্রেমিকা 


কত তির বিঁধে আছে বুকে 

তবুও নতুন আলোর গানের কাছে 

সুর চাইতে এসেছি 

সব ক্ষত ঢেকে আবার জ্যোৎস্নায় 

কিছুটা উপশম চেয়েছি 

ওদের বারান্দায় নেমেছে কত সাদা পাখি 

রোদের সুস্পষ্ট উচ্চারণগুলি তাদের ঠোঁটে ঠোঁটে স্বরলিপি 

গড়ে যাচ্ছে শূন্যতায়, উচ্ছ্বাসে 

ভোরবেলার দিকে কোনও নক্ষত্রের কাছে 

নিজের জাগরণ লুকিয়ে 

এখনও লজ্জানত আমি 



ভুবন



ভুবনের রাস্তায় ভুবন দোলাচ্ছে কারা এসে?

আমি ভ্রমণে এসেছি আবার ভ্রমণে চলে যাব

যেতে যেতে ভুবনকে দেখে নিচ্ছি দু'দণ্ড ছায়ায় বসে

পাখিরা উড়ে যাচ্ছে গান ভরা ঠোঁটে

মৃদু মেঘের কম্পনে বৃষ্টি দুলছে

বাতাস তবুও মৃদু হেসে কী বলে যাচ্ছে কানে কানে!

ধর্মের বিষাদে অন্ধকার আটচালা বাড়ি

থেকে থেকে গভীর শোক উথাল-পাথাল করে

নিভে যাওয়া প্রদীপের নিচে ওরা তবুও সংসারী

ডাইনে-বাঁয়ে কোথাও পাঠশালা আছে

বিদ্যা-অবিদ্যা সেখানে পড়ে,পড়তে পড়তে বড় হয়

তারপর শীতে সোনালি কাঁথা বোনে

এখানে চুপচাপ থাকে, কিছুটা দূরে হইচইদের পাড়া

চেনাজানা কল্পনারা রোজ আসে স্বর্গে-নিসর্গে উঠে পড়ে,

যদিও তাদের লাগে না তেমন কোনো মই

দাঁড়ি-কমাবিহীন এই সাম্রাজ্যের বিজ্ঞাপনের পাশে

ঈশ্বরকে খুঁজতে খুঁজতে আমার শুধু অভিমান পাই

অভিমানে অভিমানে ভুবন ভরে যায়…


                         

সংকট আমি সংকটের নিকটে রোজ যাই চেয়ে থাকি তার গর্তের দিকে দু'চোখ জুড়ে শুধু অন্ধকার ওখানে কি বিশ্রাম থাকে তবে? বিশ্রামের সঙ্গে কি বিবাহ আমার? তবে তো আঁধারগামী, আমাদের পাতালে বাসর! নক্ষত্রখচিত মেঘ কবরী সাজায় তাদের আলোর ঘ্রাণে জেগে ওঠে কাদের সমাজ? আমার সমাজ নেই ; সারারাত আগলাই মৃত বিশ্বাস। নিশিহাঁস উড়ে গেলে বুঝি তারও প্রাগভাষা আছে নিঃশব্দে স্মৃতির দাঁড় টেনে নিয়ে যায় এ-জীবন বাতাস কুড়িয়ে নেয় ঝরা দীর্ঘশ্বাস… আমি শুধু কলেবর দেখি অহংকার মোচন হলে এই শীর্ষদেশ ইন্দ্রিয় মুছে ফেলে দ্যাখে শুধু ধ্বংসাবশেষ।

Post a Comment

أحدث أقدم