তূয়া নূর এর গুচ্ছ কবিতা ।। ঈদ আয়োজন ।। পেখম

   ভাঙ্গে


হাত থেকে মেঝেতে পড়ে চায়ের কাপ ভাঙে 
পানির কাঁচের জগ, গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়। 
নদী ভাঙে, ঘর বাড়ি ভাঙে,
তুমি নদীর পারে দাঁড়ালে দেখতে পাবে। 

কিছু জিনিষ ভাঙে চোখের আড়ালে,
দেয়ালের আড়ালে—শব্দ হয় না তাতে।
ঘুম ভেঙে গেলে গোমড়া মুখ করে স্বপ্নরা ভেঙে যায়। 

মন ভেঙে যায়। 
অথচ দেখো এই মনটা কাঁচ-মাটি ও পানির মতো 
কঠিন, তরল কোন পদার্থে তৈরি নয়। 



    অন্য বেলা


সূর্য পড়েছে ঢলে
উঠোন থেকে আস্তে আস্তে যাচ্ছে রোদ সরে
লাল টালির ছাদে নরম পরশ
গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পাতা 
নেড়ে দেয়া শাড়ি বাতাসে উড়ছে এলোমেলো। 
ছোটবেলায় ছাঁদে বসে বিকালে বিমূঢ় হয়ে এভাবে দেখতাম বিলিকাটা চুল ছুঁয়ে রোদের চলে যাওয়া। 


    পরের সময়ের জন্য


মাটির অনেক গভীরে একটা গ্রীন হাউস বানাও
সব ধরণের গাছ, ধানপাট খাদ্য শস্যের বীজ রেখো সেখানে। 
সবার গুদামে জমানো আনবিক বোমা দিয়ে পৃথিবীটাকে হাজারবার ঝলসানো যাবে। 
গাছ পালা মাটি পুড়ে হবে কয়লা। 
কোন মানুষ যদি যায় সেই তাণ্ডব থেকে বেঁচে যায় সৌভাগ্যক্রমে?
সেই গাছ রোপন করে ডেকে আনবে সবুজ 
নীল আকাশ, পানি ও বৃষ্টি। 
মাটি নরম হলে ছড়িয়ে দেবে ধান, গম এ রবিশস্যের বীজ,
আবার শুরু হবে নতুন করে সভ্যতার। 
নতুন করে জীবনঘাতি অস্ত্র বানাতে লাগবে কয়েক শ’ বছর,
ততোদিন অন্ততঃ শান্তিতে থাকবে পৃথিবী। 


    হারায়ে ফেলা


হারায়ে যেন না যায়—নিজেকে খুব শাসায়ে
খুব যত্নে তুলে রেখেছো। 
তুমি ছড়া আর অন্য কেউ জানেনা তার খবর। 
কেউ কখনো সন্ধান পাবে না তার। 
খুব মূল্যবান একটা রত্ন। 
এতো সাবধান হয়েও হারায়ে ফেললে তুমি!
ঠিক কোথায় রেখেছো বলতে পারো না,
তন্নতন্ন করে ঘরবাড়ির খুঁজেছো সব জায়গা। 
আলমারী, ড্রয়ার, জামা ও জিন্সের প্যান্টের পকেটের ভেতর ছোট পকেট।
ভুল করে কোথাও পড়ে গেলো কী না!
চলে গেছে আবর্জনার সাথে?



     দেহ


ভেবে দেখো মানুষের দেহ স্বল্প পরিসরে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ রাস্ট্র ব্যবস্থার মতো,
শরীরটা নিয়ত টিকে থাকে প্রবল যুদ্ধ করে 
তার শত্রু অনেক, দৃশ্যত ও অদৃশ্যত। 
তাকে পরাস্ত করা এতো সহজ নয়!
চার চারটা প্রতিরক্ষা স্তর পার হয়ে তবে তাকে ধরাশায়ী করে। 

পরাজয়ের সাথে সাথে শরীর জুড়ে চলে পোকাদের আনন্দ ভোজ উৎসব।
দুর্গন্ধ ছড়াবার আগে শবদেহের অন্তেষ্ট্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় নিজ নিজ ধর্ম ও আচার মতে। 

চিকিৎসার ভাষায় মৃত ঘোষণার পর কখনো কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখে
সেটা আত্মীয় স্বজনের জন্য সান্তনা শুধু
অনুমতি পেলে টিউব ও যন্ত্রপাতি খুলে দেবার অপেক্ষা। 

যদি দেখ এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে দুর্গন্ধ ছুটে বের হচ্ছে—
রাখা হয়েছে নাকে তুলে ও আতর মাখায়ে গায়ে,
রুমাল দিতে হয় নাকে। 
দেখেও না দেখার ভান করে পথ চলতে হয়। 
জেনে রেখো সেই রাষ্ট্র-দেহ মরে গেছে অনেক আগে 
বাকীটা এখন পচে গলে যাচ্ছে। 


 


Post a Comment

أحدث أقدم