আসহাফে কাহাফ এর পাঁচটি কবিতা ।। পেখম



১) প্রাক্তনের ক্ষমা নেই 

প্রাক্তন আমাদের আদি পিতা
প্রাক্তনের বাড়ি অবিকল পূর্বপুরুষের গোরস্থান 
পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দোয়া মাঙ্গি।

প্রাক্তনের স্মৃতি ভাসে ট্রপােস্ফিয়ারে
আমাদের বর্তমান হয়ে থাকে প্রাক্তনের হেডফোন
যতই গুছিয়ে রাখি আবার পেঁচিয়ে যায়।

প্রাক্তনের এ জীবনে যতই সুখি হয় না কেন;
প্রাক্তনের ক্ষমা নেই-
প্রাক্তনের কোনো ক্ষমা নেই।



(২) পুরুষ সমাজ

পুকুরে জল নড়লে ভেতরে মাছ
গাছের পাতা নড়লে হালকা বাতাস
ধর্ষণ হলে বুঝে নাও, পুরুষ হয়েছে সমাজ। 


(৩) গামারি বনের গল্প

বাপের পিছে পিছে প্রথমবার পাহাড়ে গেলাম
নাম জানি না, পাহাড়ের!
আমাদের সাথে আরো দুজন লোক
বাপে জঙ্গল কেটে বানাবে গামারি বন
গভীর অরণ্যে অপরিচিত পাখির ডাক,  
কীটের মাতম কখনোই থামে না
রুটিন করে থেমে যায় বাপেদের কাজ
একটা গাছে গোড়ায় তারা পা ছড়িয়ে বসে
আকিজ বিড়ি টানে, গান গায়।

আমি বিড়ি খায় না, গান গাই না
আমার চোখ, গাছের শাখায় ঝুলানো খাবারের মোচায়
খুব ভোরে উঠে মা গরম ভাত রেঁধেছেন
তারপর, কলার পাতা মুড়িয়ে দিয়েছেন বাপের হাতে
সে ভাত ঝুলে আছে
ঝুলে আছে আমার দৃষ্টি
ততক্ষণে বাপে আবার জঙ্গল কাটতে শুরু করেছেন
জঙ্গল কেটে বানাবে গামারি বন। 

বছর কুড়ি পর
ছেলেকে নিয়ে আমি আবার পাহাড়ে যাই, 
বাপে নেই, সাথে দুজন পুরোনো লোক
গামারি গাছগুলো তখনো আগাছায় মোড়ানো
সে আগাছা কাটতে কাটতে পশ্চিমে হেলে পড়ে সূর্য
আমার সন্তান ভাবে, এ আমারই গামারি বন।



(৪) বিমানের পাইলট একজন পুরুষ

আসমানে তাকাও, সেখানে অংসখ্য প্রাণ
অলৌকিক নাটায়ে বাধা ঘুড়ির মতো উড়ছে
আচমকা বাতাসের ধাক্কায় সাগরের জল উঠে আসে আকাশে, 
আকাশটা হয়ে যায় মহাসাগর, ধীরে ধীরে এক টুকরো আগুন ডুবে যায় সে সাগরে
একটা দুরন্ত ঘোড়া বিমান হয়ে নেমে আসে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা রানওয়েতে
ভয় পেয়ো না, বিমানের পাইলট একজন পুরুষ।




(৫) আমাদের প্রতিবেশী

আমাদের পাড়ার মধ্যখান দিয়ে সোজা একটা রাস্তা চলেগেছে উত্তর দিকে-
শত শত হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ  খ্রিস্টানের বাড়ির উপর দিয়ে
রাস্তাটা হিন্দু না মুসলিম? বৌদ্ধ না খ্রিস্টান?
রাস্তাটার শুরু কোথায়? শেষ কোথায়? এসবের কিছুই জানি না!
যতটুকু জানি এই রাস্তাদিয়ে ধর্ম নয় মানুষ হাঁটে, সকল ধর্মের মানুষ;
এখন আমিও হাঁটি।

রাস্তাটা আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশে; রাস্তার পশ্চিমে বিরাট বটগাছ 
বটগাছের গোড়ায় অমূল্য শিকদারের মায়ের চিতা
তার পশ্চিমে বিরাট দিঘি,  দিঘিতে ওরা স্নান করে, গায়ে সাবান মাখে
দিঘির পাড় ঘেষে দাঁড়িয়ে ওদের হিন্দু বাড়ি
ওরা আমাদের প্রতিবেশী, হিন্দু নারীরা কপালে টিপ, মাথায় সিদূঁর পরে
সকাল সন্ধায় শঙখ বাজায়, উলু ধ্বনি দেয়
আগে ওদের বাড়িতে যেতাম, খেতাম ; ওরাও করতো!
এখন আর এসব হয় না
এখন আমরা ধর্ম বুঝি; মনুষ্যত্ব বুঝি না।

আমাদের তখনও নলকূপ ছিলো না, তৃষ্ণা ছিলো ; জলের তৃষ্ণা
তৃষ্ণা মেটাতে যখন এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে জল আনতে পারতাম না;
ছুটতাম হিন্দু বাড়ির দিকে
ওদের বাড়িতেও দুয়েকজন কটু কথা বলতে, জলও আনতে দিতো
আমরা কেবল জল আনতাম, তৃষ্ণা মেটাতাম
এখন আমাদের পাড়ায় ঘরে ঘরে নলকূপ, 
তবুও তৃষ্ণা মেটে না, তৃষ্ণা মেটে না, তৃষ্ণা মেটে না...।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন