পেখম ।। সুশান্ত হালদার এর গুচ্ছ কবিতা






👿স্বাধীনতাকামী জয় বাংলার কথা
 

পিতার রক্ত শরীরে 
কি করে ভাবলে
ভুলে গ্যাছি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পিতার আগুন দিনের কথা?
বারুদ বুকে দেখ 
এখনো ঠিক নিশানা তাক করা,
জটাধারী হলেও ভুলেতো যাইনি 
ট্রিগারে পিতার স্থির তর্জনীর স্বাধীনতাকামী জয় বাংলার কথা! 



👿আত্মসমর্পণের কথা 


আপনি জানেন না দু' মিনিট পরেই কী হবে 
অথচ একটু আগেই এসির বাতাসে বউকে বলে এলেন
ঘোলা জলে মাছ শিকার হলেই ব্যাংকে জমা হবে টাকা
অথচ লোকটা টেরই পেলেন না 
অদূরেই বৈদ্যুতিক খুঁটির মাথায় ঘটে যাচ্ছে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গের আকস্মিক ঘটনা  

অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে যে প্রেমিক বলে যাচ্ছেন স্বাধীনতার কথা 
পিছনে দাঁড়িয়েই বন্ধু তার ধার দিচ্ছেন চাপাতির স্বৈর শাসকের কথা 
অথচ যুবক জানেনই না 
কিছুক্ষণ পরেই ঘোষণা করা হবে রাজবন্দির আত্মসমর্পণের কথা 

বয়সী হাতে এখনো ব্যাঘ্র শাবকের থাবা 
তোমাকে বললাম
উপুর্যুপরি কেউ এলেই যেন থাপ্পড়ে ঘুরিয়ে দিতে পারি মাথা 
অথচ আমি কী জানতাম 
সামনেই হায়েনার দাঁত খিচুনিতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে যুথবদ্ধ বাংলা! 



👿দা কাঁচি কুড়ালের বিশৃঙ্খল কাটাকাটি 


আমার কোন হিন্দু বন্ধু নেই
যারা ছিলেন,তারা অসম্ভব রকমের ভয়কাতুরে;হিংসুটে আর দালাল প্রকৃতির 
মুসলমানের দেশে থাকে বলে ওরা সংখ্যালঘু 
ওপারের স্বপ্ন দ্যাখে দিন-দুপুরে
সীমান্ত পেরুলেই নাকি দশরথ পিতার অযোধ্যা ভূমি?
অথচ আমি জানি কতটা প্রগাঢ় নিশ্বাসে টেনে নিয়েছে 
৫২ থেকে ৭১ এর রক্তাক্ত ইতিহাসের পটভূমি 

মায়ের যোনি বেয়ে যখন নেমে এলাম তখন দেখলাম 
দা কাঁচি কুড়ালের বিশৃঙ্খল কাটাকাটি 
কেউ কেউ জাতপাত ভুলে হাঁক দিচ্ছেন মহা মানবের 
কেউ জীবনানন্দের সভাঘরে সুকান্ত চিন্তায় হাঁপিয়ে ওঠেছেন নজরুল বিদ্রোহে
কেউ সুকুমার চিত্তে ডেকেই চলেছেন আল্লাহ,হরি
কেউ গৌতম বুকে শুয়ে চিন্তা করছেন যীশু খ্রিষ্টের 
অথচ এই আমি 
জাতপাত ভুলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় কবিতা লিখছি মা মাটি মানুষের! 



👿বড় দুষ্কর বেঁচে থাকা 


পাখিদের আকাশ থাকে 
স্বাধীনতা থাকে না 
শিকার দক্ষ দেশে ধনুকও যখন গর্জন করে ওঠে 
তখন পশুদেরও অরণ্য থাকে না 
থাকে ভয় আর ওঁত পেতে থাকা নৃশংস হত্যা

নিজেকে বাঁচিয়ে বড় দুষ্কর বেঁচে থাকা 
পায়ে পায়ে এই যে পথ চলা;সেখানেও পেরেক তারকাটা
বিদ্বেষপূর্ণ দেশে সবাই যখন হ্যামিলিওনের বাঁশিওয়ালা
তখন ধীবরের জালে আটকে পড়া আমি এক ইঁদুর ছানা! 



👿রক্তমাখা পোস্টারে সূর্য ডোবার দৃশ্যায়ন 


যারা লুট করছেন,করে যান 
আপনাদের শহরে আজ আমরা সেবাব্রতে অতিথি পরায়ণ 
যদি বলেন
শরীরের মাংসপিণ্ড থেকে বানিয়ে দিতে হবে নলি কাবাব মাটন 
থাই স্যান্ডউইচ কিংবা গ্রিল চিকেন উইথ তন্দুরি 
তাহলে 
নিষ্পলক দৃষ্টির আড়াল থেকে তুলে আনবো এ্যাসপ্যারাগাস সহ শতবর্ষ পুরনো শ্যাম্পেইন 
যদি বলেন 
নারীর শরীর পারফিউমে দিবানিদ্রায় সমকামী হুরে সঙ্গম তৃপ্তি অনুভব করবেন 
তাহলে 
জিউস প্রার্থনায় আমরাও খুলে ফেলবো ঈশ্বর প্রদত্ত পোশাক পরিচ্ছদ 
ভুলে যাব অস্তিত্বহীন শরীরে কোনদিন নাড়ী মোচড় দেয়া ক্ষুধা ছিল 
আগুন টক্করে কোনদিন জ্বলে উঠেছিল প্রমিথিউস 
ভুলে যাব
নিশানার টার্বাইন ঘেরা কোলাহল মুখর রাত্রির আগুন প্রজ্জ্বলিত অপেক্ষমাণ দিন 

যারা লুট করছেন,করে যান 
নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় আমরাও দেখে নেব 
রক্তমাখা পোস্টারে কে এঁকেছিল সূর্য ডোবার এক ভয়ানক দৃশ্যায়ন!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন