প্রদীপ মণ্ডল এর গুচ্ছ কবিতা ।। ঈদের বিশেষ আয়োজন ।। পেখম


রক্তবীজ


১.
ঘামজলে ক্লান্তি ধুয়েছে ওরা
ক‍্যাসডোলকে জেনেছে অসুখ
নিশানকে সমুন্নত রেখে হেঁটেছে পায়ে পায়ে
সে যাত্রায় কোনো মোহকামনা নেই

সবুজ-শ‍্যামলে তিল-কলাইয়ের ফুল ফুটিয়েছে দণ্ডক-স্বরাজে

ঢেউ ভেঙে বিস্ময়ের আঁচে বেঁধেছে অনিশ্চিত জীবন
মহাকাল নিশ্চুপ হলেও জেগে রয়েছে হাতুড়ি-কাস্তে হাত
চাঁদ গলে গেলেও দমেনি চণ্ডাল
পাঁচশালা স্বপ্নে ভরিয়ে তুলেছে আন্দামান নৈনিতাল

২.
তেষ্টা ফুরোনোর আগে রক্তবীজ কেড়েছে খুনী
উপড়ে ফেলেছে স্বপ্ন দেখা চোখ সাম‍্যের জ‍্যোতি
রক্তজবার অঞ্জলি খেয়েছে গুলি আগুন চরাচর
আসেনি কোনো দেবতা পাশে ছিলো না কোনো দেবী
তর্জনী উচিয়ে ছুটে এসেছে বেয়নেট অহংকার
জিজ্ঞাসায় চোখ রাখেনি কেউ রক্ত চিহ্নেরা কোথায়?
পরিযায়ী হত‍্যাদৃশ‍্যে ক্রমেই নিঝুম হয়েছে মরিচঝাঁপি

৩.
দৈব‍্যের বাতাসে নিভিয়ে দিয়েছে প্রজ্জ্বলিত নাভি
ক্রান্তিদেশ খুঁজে অভিষ্ট রেঁধেছে প্রান্তদেশের উনুন
আইনসভার গুহায় ছড়িয়ে দিয়ে মুঠোভর্তি মহুলের গুড়ো
ইতিহাস লুকিয়ে নিয়েছে কোটের পকেটে
জ্বালিয়ে রেখে অন্ধকার।

কাকে খেয়েছে কাকের সপিণ্ড

আচ্ছন্ন সম্ভোগে হরিদ্রাভ শবের উপর
শপথ নিয়েছে জ‍্যোতিদগ্ধ কান্তি
পূর্ণযতি অশব্দ নাভি থেকে তুলে খেয়েছে
জলহাওয়ার রাত্রি
রক্তের ভেতর যতো বীজ ছিলো লুকোনো
অন্ধকারে নিভিয়ে আলো সাবধানে গুছিয়ে
অন্তর্দেশীয় শরীর
মাতোহারা হয়ে গেছে কোলাহলে

৪.
গোত্রপোড়া আগুনে হাত সেঁকে কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর রাত্রে
বেদনায় ডোবে, ডুবিয়ে দেয় আত্মদীপ
প্রতারণার মিথ ভেঙে জেগে ওঠে বিদেহ
বিনির্ভর গদিঘরের সামনে দাঁড়ায় সীমান্ত স্থবির
ধর্মাধর্মের উপর নির্ভর করার মতো শক্তি আমার নেই
ম‍্যানিফেস্তর লাল-নীল-সবুজ হলুদেরা কফিমাগে সংঘাত রেখা টানে
এতভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু মতিরাখে ... পঞ্চবানে
রুদ্রাক্ষর জলে বিপর্যস্ত চাঁদ ডুবিয়ে আগুন জ্বালায়
নিশান উড়ায় মন্দির চূড়ায়

অগ্রন্থিত খরায় পুড়ে যায় শম্ভুকের উত্তরপুরুষ
রাগ বসনত্ ছুঁতে চেয়েও পারে না চণ্ডালের বিমুগ্ধ ঠোঁট
তর্কাতীত অক্ষর যন্ত্রণা নিয়ে গোপনে ঘর বাঁধে দলিত পাড়ায়

৫.
অন্তর্ঘাতী স্বদেশপ্রেম নীলবর্ণ পারিজাত
মরিচাধরা কাস্তে কুড়ালে শান দিয়ে কাটে
শিরা-উপশিরা রক্তনালী, আসমুদ্র হিমাচলে
বহুত্বের মন্ত্র নিয়ে বোধি হয়ে ওঠে
অথচ এদের কারোর সুনির্দিষ্ট পথ নেই কোনো

নীলে গোলা লাল ক্ষমতার চাঁদ দেখায়
অগমের উপরে নির্বাণ শরীর
ঘামেভেজা সঞ্চয় কেড়ে নেয়,কুড়িয়ে নেয়
অগ্রন্থিত খেদ পাণ্ডুলিপি আধপোড়া চোখ
পংক্তিতে পংক্তিতে আগুন বিলিয়ে
নৈঃশব্দে জ্বালায় রতিশিখা কামিনী জীবন
বিরাগে বৈরাগ‍্যে জাগায় সহজিয়া ভাব
সংগুপ্ত সিনানে ভাঙে হাতির রমন

৬.
পয়ারের এই দেশে ঘর পোড়ে রুহু চণ্ডালের
অক্ষরের উনুনে ইতিহাস পোড়ে নমো-উদ্বাস্তুর
ক‍্যাম্পে ক‍্যাম্পে বিছিয়ে জীবন
চিৎ সাঁতারে সহে জলের ছলাৎ
স্তনে স্তনে কাঁচা দাঁতের স্তম্ভন
তবুও পোড়ামুখ সুখ খোঁজে জল ঢেলে আকন্দ উদ্দীপন
না- কোনো পরিভাষা নেই; নেই কোনো দধীচি
তৈরি হবে না কোনো পাশা
অর্থান্তর নেই তারপরেও অসম্ভব নয় মেনে জ্বালিয়ে 

রাখি নিভন্ত আগুন ভালোবাসা।


 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন