মাহফুজা আক্তার বৃষ্টির গুচ্ছ কবিতা ।। ঈদের বিশেষ আয়োজন ।। পেখম

বিভোর আমি

সূর্য যেভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে,
আমি ও বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে তোমায় রেখে 
প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছি দিনের পর দিন,
আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে অর্ধচন্দ্র সুখ, 
সন্ধ্যাতারার ভিজে হাসি, 
ধেয়ে আসা সুখের আলোক ছটা ও আমায় ছুঁয়ে 
যেতে করেছে মিথ্যা প্রয়াস সাক্ষী ঐ ইশ্বর আর তুমি
নিখোঁজ হওয়া পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চারপাশে ডানা ঝাপটাচ্ছে,
কাতরস্বর মিশ্রিত আওয়াজ কানের কাছে 
ফিসফিসিয়ে বলে যাচ্ছে হারিয়ে যাওয়ার কারণ,
তবু বিভোর আমি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছি 
তোমার অসার উঠোন জুড়ে।


তুমি কে হও আমার


দৃশ্যের পেক্ষাপট কাকে ঘিরে

তা  কেবল চিত্রকর ই জানে 

কান্নাদের নিজস্ব ঠিকানা খরস্রোতা নদী

বুকের মধ্যে সাইবেরিয়ার প্রচণ্ড ঝড় জানে শুধু

তুমি কে হও আমার।


পাড়ি দেয়া রক্ত পুকুর,

শেওলা জমা পথের জমে থাকা অগণিত কথা

অসুস্থ পাহাড়ের উদর বুঝে 

ঔষদ কে কতটা ঘৃণা হয়,

পৃথিবীর অনাবাদি জমিরা জানে শুধু

তুমি কে হও আমার।


 বট বৃক্ষের পাতাহীন শাখা প্রশাখায়

বসে থাকা টুনটুনির গায়ে রোদের তাণ্ডব

নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জমে থাকা

বরফাচ্ছাদিত চাদর কথা কয়

ভেঙ্গে পড়া রাতের নিরবতা

একলা ঘরে বোবা আর্তনাদ 

বাড়ন্ত সুখের  গোপন বিলাপ 

 তৃষ্ণার্ত ভালবাসার ঠোঁটে জমে থাকা 

না বলা চিঠির উত্তর জানে শুধু

তুমি কে হও আমার।


উচ্চমূল্যে কেনা কিছু সুখের মরীচিকার মতো স্বভাব

আয়নায় বিকৃত মুখচ্ছবি

অপরিশোদ্ধ ঋণ

থেকেও না থাকার ভয়ে কাতর কাগুজে পাখি

যেকোনো সময় ডুবে যেতে পারে

শঙ্কিত স্মৃতির শহর জানে শুধু

তুমি কে হও আমার।


পূর্ণতার খোঁজে


খেয়ালের ফাঁদে জোৎস্নার চাঁদ,

বিষন্নতার আধারে তামাটে তনু কৃষ্ণবরন হাত।

মোহের বন্যায় অস্তিত্ব জুড়ে কুপোকাত,

অন্তহীন প্রতীক্ষার স্থিরচিত্র জুড়ে হাজারো অজুহাত।

অপূর্ণতার কথামালা নীল আকাশে মিলিয়ে যাক,

আমার উঠোন পানে সুখের ভেলায় করে পূর্ণতা নেমে আসুক।



বলতে পারবে


ফেলে আসা প্লাস্টিকের গ্লাস, 

ধুলোমাখা পুরনো কাগজ,

বাদামের খোসা ছাড়িয়ে ফেলে যাওয়া  অবশিষ্টাংশ 

কেউ কি আছো আশেপাশে

বলতে  পারবে তাদের প্রথম কে ছুঁয়েছিল।


জলপুকুরে পড়ে থাকা জলপাই পাতার ছবি

স্বচ্ছ পানিতে মিশে থাকা পদ্মপাতার সমর্পণ 

অতলে ডুবে থাকা মাছ 

শিকারি মাছরাঙার তীক্ষ্ণ ঠোঁটের ঘা

কেউ কি আছো আশেপাশে

বলতে  পারবে তাদের প্রথম কে দেখেছিল।


অচল সময়ের গান

ভাঙ্গা আয়নার টুকরোতে আটকে থাকা অভিশাপের আর্তনাদ

বিস্ফোরিত সপ্নের বিকট শব্দ 

রাতের বুকে জেগে থাকা কুকুরের ঘেউ ঘেউ কর্কশ আওয়াজ

গুঙ্গুর পায়ে আকাশের নগ্ন নৃত্যের কান ফাটা শব্দ 

কেউ কি আছো আশেপাশে

বলতে  পারবে তাদের প্রথম কে শুনেছিল।


রাজার পুত্র আর ঘুটেকুড়ানির প্রণয়ের অনুভূতি

শরীরের ভাঁজে ভাঁজে

 ছুঁয়ে যাওয়া প্রজাপতি সুখের সাতকাহন

চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা সময়ের কষাঘাত

দৈর্ঘ্য প্রস্থের সুত্র না জানা অঙ্ক কষতে বসা বোকার ফলাফল

আগুন নদী সাঁতরে পার হবার প্রত্যয়

জীবনের কাছে গচ্ছিত অবারিত প্রশ্ন

কেউ কি আছো আশেপাশে

বলতে পারবে তাদের প্রথম কে অনুভব করেছিল।



চৈতালি শোক


শহুরে বিকেলের কুঁচকানো চামড়ার নিচে রাহাজানির দাগ,

সাদা বিড়ালের নীলাভ হওয়ার চৈতালি শোক ,

খুজে পাওয়া এনভেলোপের মুছে যাওয়া ঠিকানা,

জমে থাকা একনিষ্ঠ দুঃখ,

তোমরা আমার ভীষন আপন ।


 

7 মন্তব্যসমূহ

  1. চৈতালি শোক নামটা ভালোলাগছে💞💞

    উত্তরমুছুন
  2. জহুরুল সিকদার জয় 💞১৮ এপ্রিল, ২০২৩ এ ৯:৩৩ AM

    চৈতালি শোক নামটা ভালো লাগছে 💞✅

    উত্তরমুছুন
  3. কবিতার হাত আছে, সময়ে আরও পরিনত হবে।অভিনন্দন কবিকে।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন